প্রণব রায়চৌধুরী
মিসেস ললিতা পাল অঙ্ক বিজ্ঞান পড়ান এক স্কুলের উঁচু ক্লাসে,
একদিন কেউ না'আসায় গেলেন পড়াতে সেই ল্কুলের চতুর্থ ক্লাসে।
বললেন তিনি ক্লাসের সব ছেলেমেয়েকেই সমান ভালবাসেন,
কিন্তু সেটা যে পুরো মিথ্যা কথা কদিন মাত্র কাটলে বুঝলেন।
দেখলেন তিনি ওই ক্লাসে কমল দাস বলে একটা ছেলে পড়ে
পড়ায় একটুও সে মন দেয় না আর কথায় কথায় ঘুমিয়ে পড়ে।
নালিশ করতে হেড্ স্যারের কাছে যাবার আগে, এক দিন,
মন বলল ‘আগে ওর পুরান ক্লাসের সব রিপোর্ট পড়ে নিন’।
দেখেন প্রথম ক্লাসে ও সবচেয়ে ভাল ছেলে ও ফার্স্ট হয়েছিল,
দ্বিতীয় ক্লাসে ওর রেজাল্ট খারাপ তবে একমাস অনুপস্থিত ছিল।
তৃতীয় ক্লাসে মার ক্যানসারে মৃত্যু তাই পড়াশুনায় অমনোযোগ,
চতুর্থ ক্লাসে দেখা যাচ্ছে জীবন থেকে পড়াশুনা একদম বিয়োগ।
হেডস্যারের কাছে না গিয়ে , তিনি ওর প্রতি মনোযোগ দিলেন,
ক্লাসের সবাইকে বাড়ীর থেকে কিছু উপহার আনতে বললেন।
সবাই এনেছে নানা রকম উপহার সুদৃশ্য মোড়ক দিয়ে মোড়া,
কেউ আবার এনেছে রঙিন সুগন্ধি ফুলের কত বড় বড় তোড়া।
কমল এনেছে একটা ভাঙা বালা আর ব্যাবহৃত শিশি সেন্টের
মুড়েছে ঠোঙা-বানাবার ব্রাউন কাগজ দিয়ে তাতে ছাপ অযত্নের।
ক্লাসের অন্য সব ছেলেরা ওর এই উপহার দেখে হেসে উঠল,
ললিতা কিন্তু বালাটা হাতে প’রে গায়ে বেশ সেন্ট ছড়িয়ে নিল।
অন্য ছেলেদের হাসতে মানা করে,কমলকে খুশীর ভাব দেখাল,
কমল আনন্দিত হয়ে তখনকার মত তার জায়গায় গিয়ে বসল।
স্কুলের ছুটি হবার পরে কমল ললিতার কানের কাছে এসে বলল,
অনেক দিন পরে ললিতার গায়ে সে তার মায়ের মিষ্টি গন্ধ পেল।
পরের দিন থেকে ললিতার চেষ্টা কমলের বাঁচার উৎসাহ আনতে,
কমলের পড়ায় মন আসে , সময় লাগে না পরীক্ষায় ভাল করতে।
কবছর পরে ললিতা বাড়িতে কমলের লেখা একটা চিরকুট পায়,
খুব ভাল ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে পড়ছে জানায়।
কবছর পরে আর একটা চিরকুটে জানায় ডাক্তারী পাস করেছে,
আরও পড়াশুনা করবে বলে রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে।
একবছর পরে জানায় সে একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার,
প্রতি চিরকুটেই জানায় সেই তার শিক্ষক সবচেয়ে ভাললাগার।
পরের চিঠিতে সে জানায় তার প্রেমিকাকে চলেছে বিয়ে করতে,
অনুরোধ করে ললিতাকে এই বিয়েতে তার মায়ের জায়গা নিতে।
ললিতা বিয়েতে যায় ও মায়ের মত সম্মান আর ভালবাসা পায়,
জানে, নতুন বঊ তাকে কমলের নিজের মা হিসাবেই দেখতে চায়।
কমল বলে তার সার্থক জীবনের জন্য ললিতার ভালবাসাই দায়ী,
দুজন মানুষের মধ্যে এই ভালবাসার জন্যেই সম্পর্ক হয় চিরস্থায়ী।
৯ এপ্রিল ২০০৮