জমিয়ে আড্ডা ইন্টারনেট
 

অথবা আশীর্বাদ

[শাসকের ঠিকানায় না-পৌঁছোনো
একটি অতীত চিঠির অনুলিপি]


নীল

জানি তুমি খুব ব্যস্ত এখন কাজে,
ফিরে তাকানোর নেই কোনো ফুরসত্ !
মন্ত্রী-আমলা চৌদিকে ভিড় ক'রে,
শুনছে এবং শোনাচ্ছে মতামত ৷

আমি নগণ্য নন্দীগ্রামের বুড়ি,
শরণাপন্ন নই জেনো নিশ্চিত ৷
বিধবার জান্‌ কই হয়ে প্রাণে বাঁচে;
তুমি বুঝবে কি ভুলে গিয়ে হার-জিত্‌ ?

পোয়াতির পেটে লাথি মেরেছিলো বলে,
আর মেরো না গো--অনুনয় ক'রে কাঁদি ৷
কানে তুললো না; তাই চড় মারতেই,
কে যেনো বলেছে, আমি নাকি মাওবাদী !

'মাওবাদী নও? তবে তুমি নিশ্চই
ভূমিরক্ষার দলে লিখিয়েছো নাম' --
শোনা-ইস্তক হেসে হই কুটিপাটি;
হাসতে হাসতে চোখে জল অবিরাম --

আমার ছেলের রক্তে ধানের জমি
ভেসে গিয়েছিলো; বছর না-ঘুরতেই
চেনা মুখগুলি চেনা হিংস্রতা মেখে,
ফিরে এলো,আমি জানতাম ফিরবেই ৷

এবার সহসা ঘরবাড়ি কেড়ে নিলো,
এবার সবলে ভেঙে দিলো সংসার !
সেবার মেয়ের ইজ্জত কেড়েকুড়ে,
শান্তি ফেরাতে উদ্যত এইবার !

ত্রাণশিবিরেই ভালো আছি আমি, জানো,
স্বামীর ভিটের মায়াবন্ধন ছিঁড়ে;
তিনকাল গিয়ে এককালে পড়ে আছি,
দিন চলে যায় খেয়ে একমুঠো চিঁড়ে ৷

যে যাই বলুক,আমি বুঝে গেছি ঠিক --
ভগবান বাঁচে চাটুকার ভক্তেই;
ধমনীতে যদি শহিদ বাপের ধারা,
দেশ তবে ঋণ শোধ করে রক্তেই৷

আমি মিছে দোষ দিই না তোমায় বাবা,
তুমি নিমিত্ত,আমার'ই কপাল-ফের;
পরিণাম ভুলে পাড়া-গাঁর যত মুনি
শের বানিয়েছে ইঁদুরকে--গর্তের ৷

তবু বলি শোনো, এখানেই নয় শেষ,
কাহিনি যদিও বাকি আছে অল্পই;
ইট-পাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ি থেমে গেলে,
ভুলেও ভেবো না গল্পটা গল্পই ৷

যদিবা সেদিন বেঁচে থাকি কায়ক্লেশে,
তোমাদের মতো উল্লাসে মাতবো না;
মৃত পুত্রের স্মৃতি বুকে বেঁধে রেখে,
তোমাদেরই দেবো জননীর সান্ত্বনা --

ধকল সামলে শরীরের কথা ভেবে,
কোবরেজি মতে পাল্টিয়ে এসো বায়ু ৷
বৌ-বাচ্চার ভরা সংসার নিয়ে,
বেঁচে থেকো বাছা সহস্র পরমায়ু ৷



২৬ মার্চ ২০০৮