জমিয়ে আড্ডা ইন্টারনেট
 

সর্বস্ব

জেমস

সুহাস কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি যে কলকাতায় তার নিজের বাড়ি হবে ! কলকাতা, সাধের কলকাতা, রাজারহাটে দুঘরের ফ্ল্যাটই না হয়, তাই সই ৷ কলকাতা তো বটে ! বিনা শিয়ালদা হয়ে, লোকাল বাসে বাড়ি ফেরা? এ তো স্বপ্নের অতীত ৷

দ্রুত বদলে যাচ্ছে কলকাতার স্কাইলাইন, বাইপাসের ধারে , রাজারহাটে এক নতুন শহর গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে, একটু একটু করে, এ এক নতুন কলকাতা সুহাসের চোখে; ডালহৌসি বা শিয়ালদার ফরডাইস লেনের মেসবাড়ির সেই কলকাতা যেন কবেকার কোন সুদূর অতীতের, শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের কলকাতা, যেন উনবিংশ শতাব্দীর !

তখন সাবিত্রীরা মেসে বাসন মাজতো ৷ বা গল্পের নায়করা সামান্য ছুতোয় পশ্চিমে হাওয়া বদল করতে যেত ৷ ঢংঢং ঘটাংঘটাং করে রাতের শেষ ট্রাম গুমটিতে ফেরৎ যেত অবসন্ন শরীরে ; আবার শ্যামবাজারে খাল পাড়ে, ভোরের বারো-নম্বর ট্রাম, তারের জালের সামনে ইলেকট্রিক বাল্বের হলুদ ম্যাড়মেড়ে হেডলাইট জ্বেলে চোখ মুছতে মুছতে দিন শুরু করতো ৷

উনবিংশ শতাব্দীর ? সুহাস আপনমনে বিড় বিড় করে বলেই উঠলো, ধুৎ, এইতো সেদিন ৷ পঞ্চাশের দশকের শেষ আর ষাটের শুরুতেও কলকাতা তো এমনই ছিল ; সুহাসের পরিষ্কার মনে পড়ে, লিস্টি মিলিয়ে মিলিয়ে জিনিসপত্র ভরে শিবপুরের হোস্টেলে যাবার প্রথম দিনটার কথা ৷ এখন ভাবলেই অবাক লাগে, সেই লিস্টে একজোড়া টাওয়েলও ছিল, গ্রামের ছেলে সে, সারাটা জীবন গামছা ব্যবহার করে এসেছে, তোয়ালে কেবল বালিশের ওপর পাতা দেখতে অভ্যস্ত, ভেবেই পায়নি এ সব কি আদিখ্যেতা ! এখন বোঝে সেটা আসলে এক রকমের কলোনিয়াল উত্তরাধিকার, কবে ম্যানুয়াল লেখা হয়েছিল, "সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে" ৷

সুহাসের সেই কলকাতায় কেবল কলকাতার লোকেরাই থাকতো, ফ্যান্সি লেনের গলিতে বা সেই সব দামী জামাকাপড় পরা ক্লাস-মেটরা, যারা সপ্তাহান্তে শনিবার দুপুরে ক্লাস শেষ হলে পর, হাওড়া স্টেশন থেকে পাঁচ বা ছ 'নম্বরের ঢাউস স্টেট বাস ধরে সাউথ ক্যালকাটায় যেত ৷ সুহাসদের কাছে সে এক অজানা দেশ, পুর্ণ, বিজলী সিনেমাহলের দেশ ... ফাইনাল ইয়ার পাশ করা অবধিও যা তার কাছে অজানা অচেনাই রয়ে গিয়েছিল ৷ তাদের কলকাতা শিয়ালদা, হাওড়া স্টেশন, হ্যারিসন রোড বা বড়জোর মেট্রো সিনেমা, লাইটহাউস, মেরে কেটে প্ল্যানেটারিয়াম অবধি ৷
সেই কলকাতায় নিজেদের বাড়ি ? সে তো কল্পনারও অতীত, কোনদিন ভাবেওনি সুহাস ৷ পাশ করে কিছুদিন মেসে থেকে ট্রেনিং করেছিলো নেতাজি সুভাষ রোডের এক ক্রেন ডিজাইন কোম্পানীতে , তারপর ভাসতে ভাসতে এ শহর সে শহর ঘুরে শেষে সুদূর মেলবোর্ন ৷

গন্তব্যে পৌঁছুনো, নাকি যাত্রার শেষ ... কোনটা ? শেষেরটাই বোধহয়... ক্লান্ত শরীর নিয়ে টেন-ডাউন বম্বে-হাওড়া মেল সাঁতরাগাছি পৌঁছে গেছে, আর একটুখানি মাত্র, দরমার বেড়ার চায়ের স্টল, পুকুরঘাটে বাসন মাজার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, সুহাসেরও এবার ঘরে ফেরার পালা, অন্তত সেই ইচ্ছেতেই রাজারহাটে একটা দুঘরের ফ্ল্যাট কিনেছে ৷ এবারের ভারত ভ্রমণ সেই কারণেই, বাড়ির চাবি হাতে পাবে ৷ উ: ! বিশ্বাস হতে চায় না, কলকাতা থেকে লোকাল বাসে বাড়ি পোঁছুনো, শিয়ালদা না হয়ে ! নিজেকে আকবর বাদশার সঙ্গে তুলনা করবে কি !

হঠাৎ তার মনে হল, মানুষের জীবনটা এতই ছোট, মহাকাল তো অনেক বড় ব্যাপার, এই শিয়ালদার চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম বা ওপরের স্ট্রাকচারের ট্রাসগুলো তার ষোলবছরে যেমন ছিল এখন তেমনিই রয়ে গেছে, মাঝখান থেকে তারই যাত্রার সমাপ্তির ওয়ার্নিং-বেল বেজে উঠলো, এবার খাতা জমা দিতে হবে ৷

কদিন ধরেই রাজারহাটে যেতে হচ্ছে সুহাসকে, ফ্ল্যাটের কোন কাজ বাকী আছে কিনা, কোন ডিফেক্ট আছে কিনা, হ্যান্ডওভারের আগে খুঁটিয়ে দেখে না নিলে পরে কোম্পানী কোন দায়িত্ব নেবে না ৷ তাই এত সতর্কতা ৷ স্বভাবে সে আবার খুঁতখুঁতে টাইপের, তার ওপর এতদিন বিদেশে থেকে নজরটাও গেছে উঁচু হয়ে, বিশেষত বাড়ির ফিনিশিংএর ব্যাপারে ৷ তার মেলবোর্নের বাড়িটা জমি কিনে তারপর বানানো ; যে পথে সাধারণত: ভারতীয়রা যায় না, কে আর উটকো ঝামেলা নিতে চায় ! সবাই রেডিমেড বাড়িতেই খুশী ৷

রাজারহাটের এদিকটায় এখন বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে, বিশাল বিশাল ট্রাক, কংক্রীট-মিক্সারের আনাগোনা, লোহার শিক আনলোড করছে ট্রাক থেকে, কোথাও বা অতিকায় ক্রেনের কেরামতি ; শীতের শেষ এখন , বসন্ত তো কবেই উধাও কলকাতা থেকে ... গরম পড়তে শুরু করেছে, মাঝে মাঝেই অল্প হাওয়া দিতেই ধূলো উড়ছে ৷ এখানে ওখানে সব অতিকায় উঁচু বাড়ি তৈরী হচ্ছে, ভারা বাঁধা ৷ মিস্ত্রী-মজুর, কন্ট্রাক্টরের লোকজনের ঘোরাফেরা, দু একটা সাইকেল রিকশা আর মাঝে মধ্যে এক আধটা গাড়ি হুস করে চলে যাচ্ছে নব্বই ফুট চওড়া ছ লেনের নতুন রাস্তা দিয়ে ৷
সুহাসদের ব্লকটা বড় রাস্তাটা থেকে সামান্যই ভেতরে, প্রথম দিন রিকশাচালক ওকে মোড়ে নামিয়ে দেখিয়ে দিল ৷

"বাবু চা খেলে কিন্তু আমার বউ এর দোকানেই খাবেন, ঐ যে ওখানে ৷" ছোট বড় কয়েকটা ঝুপড়ি মোড়টায়, ঝুপড়িও বলা যায় না, কোন রকমে একটা আচ্ছাদন দেয়া আর কি । সুহাস কথাটা গায়ে মাখলো না, তবে মনে মনে প্রশংসা করলো রিকশাচালকের মার্কেটিং দক্ষতার ৷ জিজ্ঞেস করতে সাহস হল না, তারা কি রাজারহাটের এই সব গ্রামের আদি বাসিন্দা ৷ হুম, গ্রামের তো নাম ছিল, আটঘরা, তেঘরা, সবটাই তো রাজারহাট নয় ৷ কেমন কেমন লাগে সুহাসের, তার যেখানে ব্লক, সেখানে এই কিছুদিন আগে হয়ত কারুর পুকুরঘাট বা তুলসীতলা ছিল ৷ না এসব চিন্তা করলে ভাত খেতেই পারবে না সে ৷ আজ থেকে ষাট সত্তর কি দেড়শো বছর পরে লোকে ভাবতে বসবে, এই ঝাঁ-চকচকে শপিং-সেন্টারের পাশে আটঘরা কথাটা কেমন যেন বেমানান ৷ আজকের কলকাতায় বাদুড়বাগান যেমন ৷

বাড়ির ইন্সপেকশান বেশ খাটুনির এবং সময় সাপেক্ষ ৷ কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে খেয়ালই নেই সুহাসের, সেই কখন এসেছে, একদিনে শেষ হবে না ৷ যাবার পথে চায়ের তেষ্টা পেতে সুহাস কি ভেবে ঐ রিকশাচালকের বউ এর দোকানেই গিয়ে পৌঁছুল ৷ দোকান ? একটা কালো প্লাস্টিকের ছাউনি দেয়া খেলাঘর টাইপের, বাঁশের চালাও বলা যায় না তাকে ৷ কয়েকটা ইঁটের ওপর ভাঙ্গা স্ল্যাব বসানো বেঞ্চি ৷ তবে চায়ের জন্যে কিন্তু অত্যাধুনিক ফ্লাস্ক, কটা বয়েম ভর্তি বিস্কুট আর হাবি জাবি ৷ হুস হুস করে প্রাইমাক্স স্টোভ চলছে না এটাই বাঁচোয়া ৷ খদ্দের হলো সব ওখানে কাজ করতে আসা কুলি কামিন, মিস্ত্রী মজুর, ড্রাইভার , খালাসী আর কি ৷

ওষুধের গেলাসের সাইজের প্ল্যাস্টিকের কাপে কি সুহাসের পোষায়, মগ ভর্তি চা কফি খেতে অভ্যস্ত সে; "আর এক কাপ দেবেন তো ৷" বেশ ক্ষিধে পেয়েও গেছে, সঙ্গে আরেকটা বিস্কুটও নিল ৷ আর তখনই নজর পড়লো মহিলার প্রতি, চেনা চেনা ? কেমন যেন একটা আলগা সৌন্দর্য মহিলাটির ৷ সুহাসের জীবনে এই রকম থমকে থাকা মুহূর্ত বেশ কয়েকবার'ই এসেছে; তবে হাতে গোনা যায় ৷
এই রকম করে সুহাসিনীর আবির্ভাব নতুন নয় তার জীবনে, কি ভাবে যেন চোখ আটকে আসে, ফেরানো যায় না ৷ কিন্তু এই মহিলার তো ময়লা ছাপা শাড়ি পরনে, বয়স ? চল্লিশ ও হবে না হয়ত, অপুষ্টিতে, ঐ পরিবেশে যৌবন বড়ই ক্ষণস্থায়ী ; কিন্তু একি ? কাটা কাটা চোখ মুখ, অবিন্যস্ত রঙচটা শাড়িতে ঢাকা শরীর, অথচ ? সুহাস বুঝতে পারছে আবার এইখানে, এই ইঁট কাঠ, লরী ট্রাক, ভাঙ্গা চোরা রাস্তা, ভারাবাঁধা সবচেয়ে আনরোম্যান্টিক পরিবেশের মধ্যে তার রাশিয়ান রুলে' আর একবার কটাক করে আটকে পড়েছে নতুন এক গাঁটে ৷ নতুন সুহাসিনী ৷ বুক ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে ৷ প্রমাদ গুনলো সে, একি, সুহাসিনী এইখানে, এই পরিবেশে ?!

বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে পঞ্চান্ন নম্বর বাসের লেডিজ সীটে বসা সেই মেয়েটি ... কালো ফ্রেমের পুরু চশমার নীচে ঢাকা চোখ, লাল পাড় সাদা শাড়ির সেই মেয়েটির মুখ এখনও তার মনে আঁকা রয়েছে, কত কত বছর আগেকার কথা; উনিশশো আটষট্টি অর্থাৎ আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে দেখা সেই মুখ ৷ অথবা উনিশশো তিয়াত্তরের পনেরো-নম্বর ট্রামের সেই মেয়েটি ? সুহাস তখন ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতো, শিয়ালদা নেমে ট্রাম ধরে অফিস ৷ সামনে দিয়ে অন্য খালি ট্রাম গেলেও ছেড়ে দিত, যতক্ষণ না 'পনেরো' আসে ৷ মেয়েটিকে এখনও চোখের সামনে দেখতে পায় সে, পেঁজা তুলোর মতন নরম তার শরীর, অন্তত সুহাসের তাই মনে হত, রোজ কলেজ স্ট্রীটের স্টপে নেমে যেত, সেই সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ; কথা বলব বলব করেও সাহস করে উঠতে পারেনি ৷ বরাবরের লাজুক সে, তার ওপর পকেট গড়ের মাঠ, বাবা মারা গেছেন, সংসারের অগাধ দায়িত্ব কাঁধের ওপর ৷

সেই সব সুহাসিনীরা এখন কে কোথায় কে জানে ৷ তারাও নিশ্চয় বয়সী হয়েছে, অবশ্যই তাই ৷ সে কিন্তু মনের গোপন কুঠরীতে তাদেরকে রেখে দিয়েছে সেই টাইম ক্যাপসুলে, ভোলেনি ৷ এও এক ধরনের বিলাসিতা ৷ নিজের মনটাকেও তাদের স্মৃতির সঙ্গে অমলিন রেখেছে, বাড়তে দেয়নি ৷

নতুন সুহাসিনীকে বেশ গেরেমওয়ালী মনে হল, রোদে পোড়া কালো মুখখানা কিন্তু ছিপছিপে চেহারা, খরিদ্দাররা অর্ডার করছে, নি:শব্দে চায়ের গেলাস, বিস্কুটটা বা সিগারেটটা এগিয়ে দিচ্ছে; সবাই ওকে বেশ সম্ভ্রম করে ৷ একটু সেক্সি ভাব অবশ্য সব মিলিয়ে ৷ সে অবশ্য এসব তেমন করে ভাবছিল না ৷ চোখে ধরেছে, ক্লিক করেছে, ভাল লেগেছে, মনের ক্যামেরায় ছবি গেঁথে গেছে , ব্যস ৷ সে তো ক্রীড়নক মাত্র ৷

পরদিনও একই রুটিন প্রায় ৷ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঘরদোর পর্যবেক্ষণ করা , বাথরুমে জল আসে কিনা, ব্যালকনিতে জল সরে কিনা, বিরক্তিকর কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজ; শেষে কিসের টানে আবার সুহাসিনীর চায়ের দোকানে ৷ দু দু গেলাস চা ও তার সাথে দু দুটো বিস্কুট ৷ হুঁ, নি:শব্দে সুহাসিনীকে দেখা ৷ না, শুধুই দেখে যাওয়া, নিকষিত হেম এক্কেবারে ৷

তৃতীয় দিন দোকানে সুহাস একা, ভর দুপুর যদিও, মানুষের ভিড় নেই, আশে পাশে সামান্য দুরেই অবশ্য লোকজন, কিন্তু সুহাসিনীর দোকানে কেবল সে , একাকিনী ৷ কোন খরিদ্দার নেই ৷

সুহাস ভাঙ্গাচোরা স্ল্যাবের বেঞ্চিতে বসতেই সুহাসিনী বিনা প্ররোচনায় বলে উঠলো, " দু কাপ চা, দুটো বিস্কুট " ৷ মুখ তুলে তাকাতেই সুহাস তাঁর মুচকি হাসি দেখতে পেল ৷ ভুবনভোলানো হাসি, এক লহমার জন্যে পৃথিবী যেন ঘুরতে ভুলে গেল, এক রতি কাল থেমে রইল ৷ থতমত খেয়ে উঠলো সুহাস, একি, সুহাসিনী কি তার মনের কথা পড়ে নিয়েছে নাকি ৷ ভারী মুশকিল তো, এই প্রথম সে কোন সুহাসিনীর সঙ্গে কথা বলছে ! বরাবরের লাজুক সুহাস, বলে উঠলো, কি করে জানলেন ?
সুহাসিনী রিপিট করলো, " দু কাপ চা, দুটো বিস্কুট,তাই তো? " ঠোঁটের কোনে সেই হাসি !

বিস্কুট এগিয়ে দিতে গিয়ে কেমন যেন অসাবধানে, নাকি ইচ্ছে করেই তাঁর বুকের কাপড় এমনিতেই সরে গেল, ময়লা জীর্ণ সেলাই ছেঁড়া ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে বুক দুটো কিছুক্ষনের জন্য সুহাসের সামনে উন্মুক্ত হয়ে রইলো, যেন তাঁর খেয়ালই নেই ৷

কেন জানিনা সুহাসের মনে হলো, সুহাসিনী বলতে চাইছে ... পথিক, আমার তো কিছুই নেই, এই বিবর্ণ শাড়ি আর তেলচিটে ব্লাউজ, খেলনা দোকান ; তোমায় দেখে মনে হয় তুমি পরদেশী, তোমার চোখ আর মনের কথা কিন্তু আমার নজর এড়ায়নি ! কি দেখলে আমার মধ্যে ? আমার না আছে লিপস্টিক, না ভাল শাড়ি ; কিসে যে তোমায় ভোলাই ! আর রূপ যৌবন ? সময়, হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর অপুষ্টি ... সবই তো নিয়ে নিয়েছে এই বয়সেই, তবু যেটুকু আছে , এই নাও, দ্যাখো ; আমার সর্বস্ব তোমায় উৎসর্গ করলাম !

বাইরের রোদ জল, ধুলো বালি থেকে বাঁচানো সেই সম্পদটুকু কিন্তু প্রায় অক্ষুণ্ণ'ই রয়ে গেছে, সময় তাতে তেমন ছোপ ফেলতে পারেনি এখনও ৷


সাতদিন বাদে ৷
' ফেরার সময় হল বিহঙ্গের ' ৷
এয়ারপোর্টের পথে সুহাস ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে উঠলো নতুন রাস্তা দিয়ে যেতে ৷ সেই দোকান ঝুপড়ির কাছে আসতেই ড্রাইভারকে থামতে বললো, থামতে না থামতেই আবার মত বদল, চলুন সোজা এয়ারপোর্টে, দেরী হয়ে যাবে নতুবা ৷
সুহাসিনী মনের ক্যামেরাতেই থাকুক, পরে যখন আবার আসবে, এই সব ঝুপড়ি নতুন কোন কাজের সাইটে উঠে যাবে, হারিয়ে যাবে, আদুরে মধ্যবিত্ত মহিলারা লাল স্লিভলেস ব্লাউজ পরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পাশের ফ্ল্যাটের বউটির সঙ্গে গল্প করবে ৷
হারিয়ে যাবে ? যাক না, শুধু স্মৃতিটুকু থাক ৷



২১ মে ২০০৮