জমিয়ে আড্ডা ইন্টারনেট
 

একটা মজার ঘটনা

প্রণব রায়চৌধুরী

আমার এক বন্ধু ইংল্যান্ডে গিয়েছিল ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ার জন্য । দেশে ফেরার সময় সে আর তার ৪ বন্ধু ঠিক করল ইউরোপের নানা দেশের বিভিন্ন শহর ঘুরে তারপরে তারা জাহাজে চড়বে ।
সেটা বোধ হয় ১৯৫৫/৫৬ সাল হবে । একটা গাড়ি ভাড়া করে তারা ইউরোপের নানা শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে । পালা করে ওদের মধ্যে একজন গাড়ি চালায় । খরচ কমাবার জন্য রাত্তিরে দুজন গাড়ীতে ঘুমোয় আর দুজন কোন হোটেলের একটা ঘরে । এইভাবে তারা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাশেলস্‌ এসে পৌঁছেছে কোন এক দিন সন্ধ্যা বেলায় ।
তখন ওখানে ওয়ার্লড ট্রেড ফেয়ার চলছে । তাই ওরা শহরের মধ্যে কোন হোটেলে জায়গা পাচ্ছে না । ওখান থেকে খবর পেয়ে ওরা শহরতলীতে হোটেল দেখতে বেরিয়েছে । বেশ কয়েক জায়গায় দেখার পরে একটা ছোট হোটেলে ওরা একটা খালি ঘর পেয়েছে ।
হোটেল মালিক - মোটাসোটা এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা , ভাঙা ভাঙা ইংরাজীতে কথা বলে - ওদের সে ঘরটা দিতে রাজী হয়েছেন । ওদের মধ্যে কোন একজন ঘরটা দেখতে গিয়েছিল । দুজন থাকবে এ ব্যাপারেও ভদ্রমহিলা রাজী হয়েছেন । পাওয়া যাবার পরে গাড়িতে এসে আর একজনকে সঙ্গে নিয়ে আর রাত্তিরে থাকবার জন্য কিছু জামাকাপড় নিয়ে আবার ওই হোটেলে গিয়েছে । ভদ্রমহিলা দরজা খুলে , যে গিয়েছিল তাকে দেখে ও তার সঙ্গে আর একজন ছেলেকে দেখে , "গেত্‌ আউত্‌, গেত্‌ আউত্‌" বলে দরজা বন্ধ করে দিলেন । ওরা নানা ভাবে চেষ্টা করেও আর দরজা খোলাতে পারল না । কেন ভদ্রমহিলা এই রকম করলেন বুঝতে না পেরে ও এখন এই রাত্তিরে ঠান্ডায় আবার ঘর খুঁজতে হবে এই কথা ভেবে মন খারাপ করে দুজনে গাড়ির কাছে ফিরে এল ও চারজনে মিলে গাড়ি চালাতে চালাতে বড় রাস্তায় ( হাই ওয়ে ) এসে পড়ল ।

এখানে তারা গাড়ি থামিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল এবার কোন দিকে যাবে । হঠাৎ সাইরেন বাজিয়ে বেলজিয়ান পুলিসের গাড়ি ওদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল । ওদের তখন মনে পড়ল হাই ওয়েতে গাড়ি থামান অপরাধ । ৪/৫ জন পুলিস ওদের গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলল । কথা বলতে গিয়েই বোঝা গেল ওদের কেউই ইংরাজী বোঝে না । ওদের কথা এরা বুঝতে পারছে না , এদের কথা ওরা বুঝতে পারছে না । ওরা হাত নেড়ে দুজনকে পুলিসের গাড়িতে উঠতে বলল আর একজন পুলিস ওদের গাড়ির চালকের আসনে বসল ।
এভাবে সবাইকে নিয়ে কাছের পুলিস থানায় এল । তখন বেশ রাত । থানার অফিসার কোথাও গিয়েছিলেন । তাকে ডেকে নিয়ে আসা হল । ওদের খুব ভাগ্য ভাল তিনি ইংরাজী ভালই জানেন । তিনি ওদের থেকে জানলেন ওরা ভারতীয় ও এখানে এসে হোটেলের ঘর পাচ্ছেনা বলে এই ঘটনা ঘটেছে । পুরো ব্যাপারটা ওদের থেকে জেনে নিয়ে উনি বললেন আজ রাত আর কিছু করার নেই । ওদের আজ থানাতেই থাকতে হবে , কাল সকালে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে ।
ওরা খুব ভয় পেয়ে ছেড়ে দেবার জন্য অনুরোধ করতে বললেন থানায় যে ব্যাবস্থা ওরা দেখতে পাচ্ছে তার থেকে ভাল সেদিন রাতে থাকবার জায়গা কি ওরা জোগাড় করতে পারবে । ওরা না বলাতে বললেন আজ রাতে চারজনকেই ওখানে থাকতে হবে । কেউ গাড়িতে থাকতে পারবে না । এই বলে ওখানের লোকজনকে দিয়ে ওই ঘরে আরও কিছু আসবাব আনিয়ে দিলেন যাতে ওদের চারজনের রাতে শুতে কোন অসুবিধা না হয় ।
রাতের খাবার বন্দোবস্ত করে দিয়ে তিনি চলে গেলেন । পাশের বাথরুমে গিয়ে গরমজলে গা-হাত পা ধুয়ে নিতে নিতে গরম গরম রাতের খাবার এসে গেল । ওরা তো তখন হাতে চাঁদ পেয়েছে । বাইরে ঠান্ডায় কাউকে গাড়িতে শুতে হচ্ছে না । হোটেলের থেকে অনেক আরামে শুয়ে ওরা কিছু বাদেই ঘুমিয়ে পড়ল । খালি একটা চিন্তা থেকে গেল ।

পরের দিন সকালে ওই অফিসার এসে কি ধরণের ব্যাবস্থা নেবেন বলে গেলেন না । দারুণ আরামে অনেক বেলা অবধি ঘুমিয়ে ওঠার পরে মুখ ধুয়ে নেবার সঙ্গে সঙ্গে প্রাতরাশ আর গরম কফি এসে গেল । আরও কিছুক্ষণ পরে ওই অফিসার এলেন । ওদের আগের রাতে বা সেদিন সকালে কোন অসুবিধা হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন ।
ওদের এই অপরাধের জন্য কড়া ভাষায় নিন্দা করলেন ও এমন অপরাধ আর কোন দিন করবে না এই ধরণের মুচ্‌লেকা লিখিয়ে নিলেন । ওরা তখনও জানে না এবারে কি হবে । উনি বললেন ওদের মাল ওদের গাড়িতে তুলে নিতে । তারপরে বললেন উনি ওদের অপরাধী বলে থানার খাতায় লিখছেন না । উলটে ওদের সম্মানিত বিদেশী অতিথি বলে দেখাচ্ছেন । এরপরে ওদের সাথে নানা হাসি-মজার কথা বললেন ও সাবধানে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে বললেন ।
ওরা তখন জিজ্ঞাসা করল সেদিন ওই ভদ্রমহিলার ওই আচরণের কারণ কি ছিল ? উনি হেসে বললেন এক ঘরে দুজন ছেলের থাকার প্রস্তাব ওনার কাছে নিশ্চয় অশালীন লেগেছিল !

১৬ এপ্রিল ২০০৮