জমিয়ে আড্ডা ইন্টারনেট
 

চোখের ভুল

মন-সঞ্চারী

আমাদের চোখ যখন কোন কিছুকে দেখে, তখন চোখের ভেতরের নানানরকম ব্যবস্থা আর আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে দেখার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা, এই দুইয়ে মিলে আমরা দেখতে পাই অবশ্যই এই পুরো ব্যাপারটিতে আলো প্রধান ভূমিকা পালন করে কিন্তু আমাদের চোখ বা মস্তিষ্ক তো কেবলমাত্র যন্ত্র , আর যন্ত্রের কাজের ভুল হওয়াও স্বাভাবিক তাই এদেরও প্রায়ই দেখার কাজে অল্পবিস্তর ভুল হয় মানে, যা সত্যি , তা না দেখে আমরা নানারকমের ভুল জিনিস দেখি, যেগুলিকে সাধারণভাবে চোখের ভুল বা দৃষ্টিবিভ্রম বলা হয়

ঠিক কি কি কারণের জন্যে আমরা এই রকম ভুল দেখে থাকি, তাই নিয়ে বিজ্ঞানীদের নানারকম তত্ত্ব আর মত আছে আমরা সেই সবের মধ্যে খুব বেশী না গিয়ে বরং কিছু মজার ছবি দেখি, যেই গুলি দেখার সময় আমরা এই ধরনের নানারকম চোখের ভুল দেখি


আকৃতিগত ভুল :

অনেক সময় একেবারে সমান আকারের বা মাপের দুটি বা তার বেশী কয়েকটি বস্তুকে আমাদের ছোট-বড় মনে হয়, ছবির মধ্যে আশেপাশের অন্যান্য অংশের বিন্যাসের জন্যে বা পশ্চাদ্‌পটের জন্যে ।
নীচে এইরকম তিনটি ছবি দেওয়া আছে ।


সামনের গাড়িটি পিছনের গাড়িটির থেকে আকারে ছোট মনে হচ্ছে


সামনের সৈনিকটি পিছনের সৈনিকটির থেকে উচ্চতায় ছোট মনে হচ্ছে


সামনের বলটি পিছনের বলটির থেকে আকারে ছোট মনে হচ্ছে


স্থির ছবিকে চলমান দেখার ভুল :

অনেক সময়, কোন স্থির গোলাকার কোন ছবি দেখে মনে হয় সেটি ঘুরছে
নীচের ছবিগুলিতে আমরা সেইরকম কিছু "ভুল" দেখতে পাবো


কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেই মনে হবে তীরচিহ্নগুলি ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে আস্তে আস্তে ঘুরছে


কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেই মনে হবে পাখিগুলি ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে আস্তে আস্তে ঘুরছে

নীচের আট'টি ছবিতে মনে হবে চাকতিগুলি ঘুরছে






উপরের ছবিতে দেখুন মনে হবে যে, বাঁদিকের চাকাটি ঘড়ির দিকে আর ডান দিকেরটি ঘড়ির উল্টোদিকে খুব আস্তে আস্তে ঘুরছে ।




নীচের চারটি ছবিতে যদি ঠিক মাঝখানে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে মাথা বারবার সামনে-পেছনে নেওয়া হয়, মনে হবে চাকতিগুলির কোনটি ঘড়ির দিকে আর কোনটি ঘড়ির উল্টোদিকে ঘুরছে


কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে মাথা সামনে-পেছনে আনুন, মনে হবে চাকাগুলি ঘুরছে ।




নীচের তিনটি ছবিতে মনে হবে নীলরঙা পাতাগুলি একটু-একটু নড়ছে বা দুলছে , আর মনে হবে যেন নীলপাতারাশিতে ঢেউ খেলে যাচ্ছে





নীচের ছবিটির দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলে মনে হবে ছোট্ট-ছোট্ট চাকতি দিয়ে তৈরী রোবটের দেহটি দুলছে, আর রোবট দুটি যেন নাচছে


নীচের ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হবে ছোট্ট-ছোট্ট চাকতি দিয়ে তৈরী রকেটটি যেন উপর দিকে উঠে যাচ্ছে


নীচের ছবিটির মাঝখানে যে গোলাকার অংশটি আছে, একটু দেখলেই মনে হবে তার মধ্যের সাদা-কালো খোপগুলি একটু যেন নড়ছে


নীচের দুটি ছবিতে চৌকো-বরফিগুলিকে মনে হবে চলছে বা নড়ছে


এই ছবিতে মনে হচ্ছে আস্তে-আস্তে কখনও ভিতরের (কেন্দ্রের) দিকে সরে যাচ্ছে , আবার কখনও মনে হচ্ছে যে আস্তে আস্তে সামনের (বাইরের) দিকে সরে আসছে

নীচের ছবিতে মনে হচ্ছে, বরফিগুলি আস্তে-আস্তে বাইরের দিকে সরে যাচ্ছে


সরলরেখাকে বক্ররেখা দেখার ভুল :

নীচের চারটি ছবিতে সরলরেখাগুলিকে মনে হবে যেন বক্ররেখা আর, সমান্তরাল সরলরেখাগুলিকে মনে হবে বুঝি সমান্তরাল নয়, কখনও তাদের মধ্যে দূরত্ব বেশী , কখনও কম



এখানে দেখুন লালরঙের সরলরেখাগুলিকে বক্ররেখা দেখাচ্ছে, আর সমান্তরাল বলেও মনে হচ্ছে না ।


রঙের ভুল :

বিভিন্ন রঙ দেখার সময়েও আমরা মাঝে মাঝে ভুল দেখতে পারি নীচের পাঁচটি ছবি দেখার সময়ে আমাদের সেই রকম কিছু রঙ-দেখার ভুল হয়


এখানে দেখুন উপরের (১.১) ছবিতে A এবং B লেখা খোপদুটির ধুসর রঙ আলাদা দেখাচ্ছে কিন্তু আসলে দুটি একই ধরনের ধুসর রঙ , সেটি বোঝানো হয়েছে তলার (১.২) ছবিতে


এখানে দেখুন মাঝখানের লম্বা ধুসর রঙের আয়তক্ষেত্রটির বাঁদিক হাল্কা রঙের আর ডান দিক গাঢ় রঙের মনে হচ্ছে আসলে কিন্তু রঙের কোন ফারাক নেই, কিন্তু ছবির পশ্চাদ্‌পটের ধুসর রঙের তারতম্যের জন্যে এইরকম মনে হচ্ছে


এখানে দেখুন বাঁদিকের অংশটি গাঢ় রঙের আর ডান দিকের অংশটি হাল্কা রঙের মনে হচ্ছে , মাঝে ওই বিভাজন রেখাটি থাকার কারণে রেখাটিকে আঙুল দিয়ে চেপে আড়াল করে দেখুন, বুঝতে পারবেন যে বাঁদিক-ডানদিক একই ধরনের ধুসর রঙের


এখানে দেখুন , বাঁদিকের হাল্কা রঙের জমির উপর কমলা রঙের চাকতিটি অনেক বেশী গাঢ় রঙের মনে হচ্ছে , আসলে কিন্তু বাঁদিক আর ডানদিকের দুটি কমলা চাকতিই একই ধরনের কমলা রঙের , কোন ফারাক নেই


এখানে দেখুন, সবুজ রঙের জমিতে গোলাপী রঙ অনেক বেশী গাঢ় দেখাচ্ছে , আবার গোলাপীরঙের সংস্পর্শে সবুজ রঙ বেশী গাঢ় দেখাচ্ছে কিন্তু আসলে একই ধরনের গোলাপী আর সবুজ রঙ ব্যবহৃত হয়েছে


তাহলে আমরা দেখলুম যে কিভাবে আমাদের চোখ আর মস্তিষ্ক নানান কারণে অনেক সময় সঠিক ভাবে যা দেখা কথা তা না দেখে কিছু-কিছু "ভুল" দেখে থাকে

৩০ এপ্রিল ২০০৮